বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০১:২৭ অপরাহ্ন

কৃষকের জমিতে আ’লীগ নেতার চাতাল নির্মান, থানায় অভিযোগ করায় বাদিকে হুমকি

কৃষকের জমিতে আ'লীগ নেতার চাতাল নির্মান, থানায় অভিযোগ করায় বাদিকে হুমকি

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে এক কৃষকের কৃষি জমি দখল করে চাতাল ও গুদাম নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার এক আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগি কৃষক জোনাব আলী জমি উদ্ধার ও নিরাপত্তা চেয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

কৃষক জোনাব আলী হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে। অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম সাজু একই গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। তিনি উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি।

থানায় দায়ের করা প্রাপ্ত অভিযোগে জানাযায, বিগত আওয়ামীলীগ ক্ষমতা আমলে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চু। ওি সময় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগি টংভাঙ্গা গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সাজু ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে তার প্রতিবেশি কৃষক জোনাব আলীর জমি দখল করে চাতাল ও গুদাম নির্মাণ করে।

সেই চাতাল ও গুদাম নিজে দাড়িয়ে থেকে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে দেন সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চু। প্রতিবাদ করলে দলবল নিয়ে কৃষক জোনাব আলীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে হুমকী ধমকী দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করত বাড়ি ঘর ভাংচুর চালায় সিরাজুল ইসলাম সবুজ ও তার লোকজন। এরপর থেকে জমি উদ্ধারে নানান চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন কৃষক জোনাব আলী।

সাম্প্রতিক সময় ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগের পতন হলে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুলের বটগাছ খ্যাত উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চু ও তার সহযোগিরা। সেই জমি উদ্ধারে থানা পুলিশের আশ্রয় নিলে পুনরায় সিরাজুল গংরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দলবল নিয়ে জোনাব আলীর বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় জোনাব আলী বাড়িতে না থাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যায় সিরাজুল গংরা।

এ ঘটনায় বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে হাতীবান্ধা থানায় আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম সবুজসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কৃষক জোনাব আলী।

ওই গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, জোনাব আলীর জমির পাশের জমি ক্রয় করে পুরো অংশ দখল করে নিয়ে চাতাল ও গুদাম করেছে সিরাজুল গংরা। ওই সময় প্রতিবাদ করেও কোন উপায় ছিল না। সিরাজুলের চাতালের মাঝে জোনাব আলীর জমিও রয়েছে।

কৃষক জোনাব আলী বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু নিজে দাড়িয়ে থেকে আমার জমির উপর সিরাজুলের চাতাল ও গুদাম নির্মান করে দেন। প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগ যুবলীগের ছেলেরা এসে বাড়িতে হুমকী দিয়ে যেত। তাই তখন প্রতিবাদ করতে পারি নি।

অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাচ্চু চেয়ারম্যান আমার চাতাল ও গুদাম নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। আমি আওয়ামীলীগের কোন পদে ছিলাম না এবং নেই। বরংচ আমার মা ভোটের সময় জামায়াতের এজেন্ট ছিলেন। আমার চাতাল ও গুদাম আমাদের ক্রয় ও পৈত্রিক সম্পত্তির উপর নির্মাণ করেছি।

টংভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্পাদকীয় পদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিরাজুল ইসলাম সবুজ ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি এবং বাচ্চু চেয়ারম্যানের খাস লোক। সরকার ক্ষমতাকালিন ওই পদ ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহারও করেছিল বলে নানান অভিযোগ ছিল সিরাজুলের বিরুদ্ধে।

হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাহমুদুন্নবী বলেন, জমি জমার বিষয়টি দেওয়ানী আইন। তাই কৃষক জোনাব আলীর অভিযোগটি প্রসিগেশন হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং বাদিকে আদালতে আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com